Monday, August 25, 2025
HomeScrollপাকিস্তানি সেনার দমন পীড়নে রক্তাক্ত বেলুচিস্তান বিক্ষোভ দমনে গুলি, নিহত ও নিখোঁজ...

পাকিস্তানি সেনার দমন পীড়নে রক্তাক্ত বেলুচিস্তান বিক্ষোভ দমনে গুলি, নিহত ও নিখোঁজ বহু

ওয়েব ডেস্ক: বেলুচিস্তানে ( Balochistan ) মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাত্রা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। কোয়েটায় বেলুচ ইয়াকজেহতি কমিটি (BYC) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিবার্গ জেহরি, তার ভাই হাম্মাল জেহরি, ডাঃ ইলিয়াস, মানবাধিকার কর্মী সাঈদা বালোচসহ বেশ কয়েকজন বেলুচ কর্মীর বলপূর্বক অন্তর্ধানের প্রতিবাদে গতকাল থেকে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। তাদের মুক্তির দাবিতে আন্দোলনরত সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক কর্মীদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী (Pakistan Army) কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। বেলুচ ন্যাশনাল মুভমেন্ট (BNM) এবং বেলুচ স্টুডেন্ট অর্গানাইজেশন আজাদ (BSO-A)-এর কর্মীদের টার্গেট করে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হয়েছে। শনিবার ভোরে সেনাবাহিনীর দমন অভিযানে নারী ও শিশুরাও আক্রান্ত হয়, এমনকি বিক্ষোভস্থল থেকে কয়েকটি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

বেলুচ আন্দোলনের অন্যতম মুখপাত্র মেহরাং বালোচ এক ভিডিও বার্তায় অভিযোগ করেছেন যে পাকিস্তান সরকার প্রথম থেকেই বেলুচ জনগণের ন্যায্য দাবিকে সহিংস দমন-পীড়নের মাধ্যমে দমিয়ে রাখছে। শনিবার সকাল সাড়ে পাঁচটায় বিক্ষোভস্থলে নিরাপত্তা বাহিনীর হামলায় পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নেয়। লাঠিচার্জ, টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ এবং নির্বিচারে গণগ্রেফতারের মাধ্যমে আন্দোলন থামানোর চেষ্টা করা হয়। পরিস্থিতি আরও মারাত্মক হয়ে ওঠে, যখন সরিয়াবে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গুলিতে তিনজন বেলুচ বিক্ষোভকারী নিহত হন এবং বহু আহত হন। এছাড়া, ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়, যাতে বিক্ষোভের খবর আন্তর্জাতিক মহলে না পৌঁছায়।

আরও পড়ুন:  ইজরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা! লেবাননকে পাল্টা জবাব ইহুদি সেনার

শুধু বিক্ষোভকারীরাই নয়, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সাধারণ বেলুচ জনগণের ওপরও ভয়াবহ নির্যাতন চালাচ্ছে। বিক্ষোভস্থল থেকে জোরপূর্বক মৃতদেহ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, যাতে নিহতদের পরিবার জানাজা আয়োজন করতে না পারে। সাঁজোয়া যানে করে বিক্ষোভকারীদের টেনে নিয়ে যাওয়া হয় এবং আটক করা হয়। পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনী BNM ও BSO-A’র কর্মীদের একের পর এক টার্গেট করে গুম, আটক ও হত্যার মাধ্যমে সংগঠনগুলোর কণ্ঠ রোধ করতে চাইছে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও টার্গেট কিলিংয়ের মাধ্যমে আন্দোলন স্তব্ধ করার চেষ্টা চলছে।

বেলুচিস্তানে চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘন আন্তর্জাতিক মহলের নজর এড়ায়নি। জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের (UNHRC) ৫৮তম অধিবেশনে বেলুচিস্তানের এই পরিস্থিতি গুরুতরভাবে উত্থাপিত হয়েছে। বেলুচ জাতীয় আন্দোলনের নেতা নিয়াজ বালোচ বলেছেন, “বলপূর্বক অন্তর্ধান এখন বেলুচিস্তানে নিপীড়নের একটি পদ্ধতিগত অস্ত্র হয়ে উঠেছে।” তিনি অভিযোগ করেন যে বিবার্গ জেহরি, হাম্মাল জেহরি এবং আরও বহু বেলুচ কর্মীকে পরিকল্পিতভাবে গুম করা হয়েছে। পাশাপাশি, নিরাপত্তা বাহিনীর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বেলুচিস্তানের সংকটকে আরও ঘনীভূত করছে।

নিয়াজ বালোচ আরও বলেন, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সরকার-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর মাধ্যমে বেলুচ জনগণের ওপর দমননীতি চালিয়ে যাচ্ছে, যার ফলে বহু পরিবার সম্মিলিত শাস্তির শিকার হচ্ছে। তিনি নিখোঁজ BSO-A সভাপতি জাহিদ বালুচের ভাই শাহজাহান বালুচের হত্যার প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, “এটি নিছক হত্যাকাণ্ড নয়, এটি বেলুচ জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার একটি সুপরিকল্পিত চক্রান্ত।” মানবাধিকার কর্মী সাঈদা বালোচ ও তার বোনকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। একই সঙ্গে কাম্বারানি পরিবারের এক ডজনেরও বেশি সদস্যের জোরপূর্বক গুমের ঘটনা এই সংকটকে আরও প্রকট করে তুলেছে। পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি না হলে বেলুচিস্তানে সহিংসতার মাত্রা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

দেখুন আরও খবর: 

Read More

Latest News